শুরু হতে না হতেই শেষ!



ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের কাছে দলের প্রত্যাশা একটু বেশিই থাকে। ব্যাটিংয়ে দলের সবচেয়ে বিস্ফোরক এবং দৃঢ়চেতা ব্যাটসম্যানরাই ইনিংস শুরু করে থাকেন। কিন্তু যখন তাঁরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, দল তখন চোখে সর্ষে ফুল দেখে।
সুনীল গাভাস্কার বলেছিলেন, ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের ঘাড়ের রগটা একটু বাঁকা থাকে। না হলে কোন ব্যাটসম্যান চাইবে মাঠে নেমেই পেস বোলারদের বিদ্যুৎগতির বল মোকাবিলা করতে! যেহেতু গাভাস্কার নিজেও ক্যারিয়ারে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন তাই কথাটিকে আমলে নিতেই হবে।
ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের বিস্ফোরক হতে হয়, অথবা হতে হয় দৃঢ়চেতার। দারুণ সব শটে বা উইকেটের ভাব বুঝে প্রান্ত বদল করে রানের চাকা সচল রাখতে হয়। এককথায়, দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানদের হাতেই তুলে দেওয়া হয় ইনিংস শুরুর দায়িত্ব। যাদের দেওয়া ভিত্তিতে এগিয়ে যায় দলের ব্যাটিং। কিন্তু গাভাস্কারের সেই ‘বাঁকা রগ’ তত্ত্বের কারণেই হোক অথবা অন্য কোনো কারণে হোক, বিশ্বকাপ জুড়েই এবার ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের খাপছাড়া ব্যাটিং লক্ষ্য করা গেছে। তড়িঘড়ি করে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা বা অতি ধীর গতির ব্যাটিং করে সমর্থকদের বিরক্তির কারণ হয়েছেন বেশ কয়েকজন ওপেনিং ব্যাটসম্যান। তাদের ইনিংসের শুরু আর শেষের চিত্রনাট্য যেন মুহূর্তেই লেখা হয়ে গেছে।
বিশ্বকাপে অন্তত ৫ ইনিংসে ব্যাট করতে নামা ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের মাঝে সবচেয়ে কম রান করেছেন আফগান ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই। ৫ ইনিংসে ব্যাট করে ১০০ রানও করতে পারেননি এই ‘বিস্ফোরক’ ব্যাটসম্যান। মাত্র ৯৬ রান করা এই ওপেনারের ব্যাটিং গড়ও এবারের বিশ্বকাপে ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের মাঝে সবচেয়ে কম (১৯.২০)। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে মারমার-কাটকাট ব্যাটিং দিয়ে পরিচিতি পাওয়া এই ব্যাটসম্যানের বিশ্বকাপটা একেবারেই ভালো যায়নি।
টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১০ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। দুই ওপেনারের অর্ধশতকে শ্রীলঙ্কার বোলিংকে তুচ্ছ করেই সেদিন জয়ের মুখ দেখেছিল কিউইরা। কিন্তু এরপর থেকেই ধারাবাহিক ছন্দপতন, প্রথম ম্যাচে ১৩৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির পর পরের ৮ ম্যাচে ওপেনিং জুটি থেকে এসেছে মোটে ৮২ রান। গাপটিল এবং মানরো আসরের ফ্লপ ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের তালিকায় সেরা পাঁচে রয়েছেন। ৯ ম্যাচে গাপটিলের সংগ্রহ ১৬৭ রান আর মানরোর রান ৬ ম্যাচে ১২৫।
কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ২০১৫ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। এবারের বিশ্বকাপে আসার আগেও শেষ তিন ওয়ানডেতে দুটি সেঞ্চুরি ছিল তাঁর। বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকেই রান খরা, প্রথম ম্যাচে ৭৩ রান করা গাপটিল পরের ৮ ম্যাচে করেছেন মোটে ৯৪ রান। আজ ভারতের সঙ্গে সেমিফাইনালেও মাত্র এক রান করে প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা ধরেছেন। ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে মাত্র ২০.৮৭ গড়টা নিশ্চয়ই তাঁকে অস্বস্তিতে রেখেছে।
একইভাবে তাঁর ওপেনিং সঙ্গী কলিন মানরোও মোটেই স্বস্তিতে ছিলেন না। ৬ ম্যাচে তাঁর ২৫ গড়ে রান নেওয়া দেখেই কিনা এরপর গাপটিলের সঙ্গী হিসেবে হেনরি নিকোলসকে ওপেনার হিসেবে পাঠায় কিউইরা। কিন্তু ওপেনিং জুটির আকাল তাতে মোটেও কমেনি।
আফগান অধিনায়ক এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম আলোচিত চরিত্র। আফগানদের ব্যাটিং, বোলিং দুই বিভাগেই সব আলো কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন। ব্যাট হাতে ইনিংস ওপেন করেছেন, বল হাতেও সবার আগে ছুটে গেছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের দিকে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হলো না। দল শতভাগ ব্যর্থ, নিজেও তাই। বিশেষভাবে ব্যাটিংয়ে ওপেন করতে নেমে নিজেকে শুধুই হাসির খোরাক বানিয়েছেন আফগান দলপতি। ৫ ম্যাচে ইনিংস ওপেন করতে নেমে ২৬.২০ গড়ে মাত্র ১৩১ রান করেছেন। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে কম রান করা ওপেনারদের তালিকায় তৃতীয় হয়েছেন।
বাংলাদেশের দুই ওপেনারও বিশ্বকাপ জুড়েই ভক্তদের হতাশ করেছেন। অতি ধীর গতির ইনিংস খেলে সমর্থকদের বিরক্তির কারণ হয়েছেন অভিজ্ঞ তামিম ইকবাল, তেমনি দারুণ শুরু করেও ইনিংস বড় করতে না পারার অক্ষমতা সৌম্য সরকারকে পুড়িয়েছে। ৭ ম্যাচে ইনিংস ওপেন করে ২৩.২৮ গড়ে সৌম্যের রান সংখ্যা ১৬৩। সবচেয়ে কম রান করা ওপেনারদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে সৌম্য অবশ্য তালিকায় একমাত্র ব্যাটসম্যান যার স্ট্রাইক রেট ১০০-র ওপরে। ৮ ম্যাচে ইনিংস ওপেন করে ২৩৫ রান করতে পারলেও মাত্র ২৯.৩৭ গড় তামিমের ব্যাটিংয়ের দৈন্য দশাকেই নির্দেশ করছে।

Comments

Popular posts from this blog

সাকিব ভুল করেছে: প্রধানমন্ত্রী

খালেদাকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে চান স্বজনরা

আমার ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার: সাকিবের বাবা