শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে এখনও নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে শোনা যাচ্ছে নানা গুঞ্জন। বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজির অভিযোগসহ নানা কারণে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৪৪৫ কোটি উন্নয়ন প্রকল্পে ৪-৬ শতাংশ চাঁদা দাবির অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলছেন। তিনি বলেন, বরং শাখা ছাত্রলীগকে কেন চাঁদা দেয়া হলো এর জবাব চাওয়া হয়েছিল ভিসির কাছে।
গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ছাত্রলীগকে ম্যাম বা তার কর্নসার্ন একটা অ্যামাউন্ট দিয়েছে। এটা জাবির সকলের প্রায় মুখে মুখে আসছে। সেটার বিষয়ে জানতে, জানাতে গিয়েছিলাম। আমরা টাকা চাইতে যায়নি।'
রাব্বানীর এ বক্তব্য প্রত্যাখান করেছে জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে এ নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে ইউনিটটি। এদিকে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারির বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি বলেন, নিজেদের কমিশন চাওয়ার অভিযোগ ঢাকতেই মিথ্যা এ অভিযোগ আনছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতারা।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘তারা তাদের মতো কাজ করে। কি কমিশন পাই তা নিয়ে আমাকে জানাতে গেলে আমি বলেছি আমার সাথে টাকা পয়সা নিয়ে আলাপ করবা না। এই কথাটাকে তারা গল্প বানিয়েছে।’
এর আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুষের বিনিময়ে কমিটি দেয়া, টেন্ডারবাজি, মাদক চোরাকারির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে মাত্র ১ বছর ধরে দায়িত্ব পাওয়া ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ নিয়েও আলোচনার ঝড় বইছিল। যার মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত ব্যক্তিদের ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেন, সম্মেলনের পরও একাধিক শাখায় কমিটি না দেওয়া, বিলাসী জীবন, দুপুরের আগে ঘুম থেকে না ওঠা, গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে চলা কিংবা ফোন না ধরা, সংগঠনের একাধিক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েও নির্ধারিত সময়ের অনেক পর উপস্থিত হওয়া অথবা অনুপস্থিত থাকা ইত্যাদি অভিযোগ।
এসব নিয়ে সমালোচনামুখর ছিলেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেইসঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতির বিয়ের অভিযোগের প্রমাণ মেলে। পাশাপাশি দুই নেতার বিরুদ্ধে ওঠা সংগঠনের নেত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগও ওঠে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় শোভন ও রাব্বানীর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় দু'জনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও বিভিন্ন অভিযোগের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।
শনিবার আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা শোভন ও রাব্বানীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ এবং অসন্তোষও প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গুরুতর অভিযোগের পর তাদের আর দায়িত্বে রাখা যায় না। ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের এই দুই নেতার এমন আচরণ সত্যিই কষ্টের।
শেখ হাসিনা বলেন, কোনো বাড়াবাড়িই ঠিক নয়। ওরা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলামের সঙ্গে শোভন ও রাব্বানীর দুর্ব্যবহার ও চাঁদা দাবির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন বলে বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের কয়েকজন জানিয়েছেন।
এ দিকে দায়িত্ব পাওয়ার পর শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসির) ডাচে আলাদা আলাদা মোটরসাইকেলে করে আসেন নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
Comments
Post a Comment